Thursday, 15 June 2017

পথে চলে যেতে যেতে (১) - অনির্বান

কথাগুলো সেভাবে লেখা হয়ে ওঠেনি কখনো, হয়তো কোনো দিনই লেখা হয়েও উঠবেনা তবু মনে হয় লিখি না কেন কিছু! হতে পারে সামগ্রিকভাবে কিছু হয়ে উঠলনা, কিন্তু এই যে দুচার কথা যা কিনা আসলে জীবনেরই চলার পথের আখর তাই লিখিনা কেন। কারোর জন্য এসব নয় নিজের জন্যই হয়ত বা বেশি বয়সের কোনো এক আমির জন্যই এই ছোট্টছোট্ট কথা, অনুভূতির কথা, অভিজ্ঞতার কথা, পাওয়া না-পাওয়ার কথা, হারানোর কথা, আরো অনেক কথা অথবা কথার কথা। তেমনই লিখলাম আজ এক মায়ের কথা

বরাবরই আমি বাসে করেই কলকাতা ঘুরে বেড়াই কাজের সূত্রে। ক'দিন আগেও সেরকমই শ্যামবাজার যাচ্ছিলাম বাসে করে। সেভেন্টী এইট বাই ওয়ান। সোজা বি টি রোড মানে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ধরেই এই যাওয়া। বাস ডানলপ অবধি মোটামুটি গতিতেই যায় ডানলপের পর থেকেই আসল খেলা।সে যাই হোক, বাস ডানলপ ছাড়িয়ে থামল পরের স্টপেজ্ বনহুগলীতে। দেখলাম একজন ভদ্রমহিলা উঠলেন, সঙ্গে একটি বাচ্ছা ছেলে। স্কুলের পোষাক। ছেলেটি রিটার্ডেড। একদমই জড়। বুঝলাম বনহুগলীতে ন্যাশনাল ইন্স্টিটিউট অব্ অর্থোপেডিক্যাল হ্যান্ডিক্যাপড্ এ পড়ে।

এতটা হয়ত স্বাভাবিক কিন্তু কেন মনে রইল সেই ছেলেটাকে বা তাঁর মাকে ,জানিনা। দেখলাম ছেলেটা বোধশক্তিহীন বাসের সিটে মহিলাটি ছেলেটিকে নিয়ে বসিয়ে দিলেন আর ঘাড়টাকে ধরে রইলেন। মাঝে দুএকবার হাত সরাতে দেখলাম ছেলেটি একদম নেতিয়ে পড়ছে। শক্ত হয়ে বসার ক্ষমতাটুকুও নেই। মুখ দিয়ে কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জামা ভিজিয়ে দিচ্ছে। আর মা মুখ মুছিয়ে দিচ্ছেন বারবার । রুমাল দিয়ে ঘাম মুছিয়ে দিচ্ছেন আর একটাই চেষ্টা করে চলেছেন ঘাড়টাকে সোজা রাখার।

মনে হল এই তো একজন "মা"। ছেলেটি হয়ত কোনোদিনই সুস্থ হবেনা হয়ত খুব বেশি দিন থাকবেও না তবু এই স্নেহ, এই ভালোবাসার নামই "মা"। মহিলাটিও আশা নিয়েই মা হয়েছেন এই সন্তানের। জানিনা এই অনুভব যন্ত্রনার না আনন্দের, নাকি অনুভূতিহীন হয়ে উঠেছেন এই ক'বছরে। তবু তো ছেলেটিকে বহন করে চলেছেন দিনরাত। আরো এইভাবেই সেই মা কাটিয়ে দেবেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছেলেটির সাথে এই আশায় যে একদিন ও সোজা হয়ে হাঁটতে পারবে।

বাস থেকে ওঁরা নেমে গেল টালাপার্কের কাছে। আমি এগিয়ে গেলাম আরেকটু। মনে মনে ভয় হল । হয়ত এক্সেপশন্ তবুও আমাদের পাওয়াটুকু সবসময় ঠিকঠাক না হলেই .... তবুও এই মা যেন শিখিয়ে দিয়ে গেল যাই হোক্ না কেন "সোজা রাখার" চেষ্টাটুকু তো আমাদের করে যেতেই হবে।

2 comments: